আজকাল সবাইকে বলতে শোনা যায় থিংক পজিটিভ। সব কিছুকে পজিটিভলি দেখুন। অথবা দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক করুন। হাজার বারও যদি আপনি কাউকে বলে থিংক পজিটিভ তাতে কোনো লাভ হবে না কারণ থিংক পজিটিভ করার উপর বা পথটি কী তা যদি জানা না থাকে তবে কিভাবে থিক পজিটিভ করবে। যেমন কিভাবে সৎ হতে হয় সবাই জানে (মিথ্যা কথা বলবো না, কারো ক্ষতি করবো না, অন্যায় করবো না ইত্যাদি) কিন্তু “কেন সৎ হব” বা কেন সৎ থাকব এই বিষয়টি যে বুঝেছে বা উপলব্ধি করেছে তার পক্ষেই সৎ থাকা সম্ভব। প্রতিটি মানুষের মনের গভীরে বোঝার ক্ষমতা বা উত্তর থাকে সুতরাং ওই স্তরে না পৌঁছলে উত্তর পাওয়া কঠিন। সুতরাং গভীর উপলব্ধি অর্থাৎ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবা এবং বুঝার চেষ্টা করা।
পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে দুইবার ঘটে; একবার চিন্তায় আর একবার বাস্তবে অর্থাৎ একবার ভেতরে অন্যবার বাইরে। মানুষ যা কিছু করে তার আগে সে চিন্তা করে। চিন্তা যেমন হবে কাজ (কর্ম) তেমন হবে। একটি কাজ বার বার করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। অভ্যাসের সমষ্টি তার চরিত্র এবং চরিত্রই নিয়ে যাবে তার গন্তব্যে। অর্থাৎ একজন মানুষের গন্তব্য সুখের জায়গায় নাকি দুঃখের জায়গায় হবে তা নির্ভর করবে তার চরিত্রের ওপর। চরিত্র নির্ভর করে অভ্যাসের ওপর আর অভ্যাস নির্ভর করে কর্মের ওপর। কর্ম নির্ভর করে চিন্তার ওপর। সুতরাং চিন্তা যেমন হবে বাকি সব ধাপ তেমনই হবে। সুতরাং জীবনকে সুখ শান্তিময় করতে আর্থাৎ সফল ও সার্থক জীবনের জন্য চিন্তাকে ইতিবাচক করতেই হবে।
প্রথমেই প্রশ্ন হলো Positive Thinking বলতে কী বুঝায়। ইতিবাচক চিন্তা মানে হলো “যে কোনো অবস্থায় সঠিক চিন্তা করতে পারা”। (Positive thinking means right thinking at every moment) যে কোনো অবস্থায় বা যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক চিন্তা করতে পারাকেই পজিটিভ থিংকিং বলে। সঠিক চিন্তা বেঠিক নয়। বেঠিক বা ভুল চিন্তা করলে তা পজিটিভ থিংকিং হবে না। এখন প্রশ্ন হলো সঠিক বা জরমযঃ ঞযরহশরহম বলতে কী বুঝায়। সঠিক চিন্তা বলতে বুঝায় “যা কিছু ঘটেছে সেই ঘটনাকে ওইভাবেই দেখা এবং ভাবা”। (Right thinking means, To see the situation/problems in the same magnitude as it is) অর্থাৎ যা ঘটেছে তা ঘটার মতো করে দেখা অর্থাৎ সোজাভাবে দেখা, বাঁকাভাবে নয়। বাঁকাভাবে দেখলে চিন্তা বাঁকা হয়ে যাবে। বিষয়টি একদম সোজা যেমন আপনি কোনো কিছু সঠিক দেখতে পান তখনই যখন আলো সেই বস্তুর উপর সোজা হয়ে পড়বে এবং সোজাভাবে আপনার চোখের ভেতর প্রবেশ করবে তখনই তা আপনি দেখবেন। সুতরাং কোনো বিষয় বা ঘটনাকে সোজাভাবে যদি আপনার কাছে উপস্থাপিত না হয় বা সোজাভাবে যদি না দেখেন বা না ভাবেন তবে সিদ্ধান্ত কখনই সঠিক বা জরমযঃ হবে না। সুতরাং যা কিছু হয়েছে বা ঘটেছে তা সেইভাবে দেখতে পারা সঠিক চিন্তা করতে পারার পূর্বশর্ত।
বিষয়টি আরও একটু বিশ্লেষণ করা যাক, পজিটিভ থিংকিং মানে এই নয় যে, যা কিছু আমার জীবনে ঘটবে সব সময় সেরা (বেস্ট) ঘটবে তা নয় বরং যা কিছু ঘটেছে সেটা ঐ সময়ে আমার জন্য ছিল একুরেট/অনিবার্য। এই অনিবার্য বিষয়টিকে একসেপ্ট করা বা স্বীকার করা। একসেপ্ট করা বা স্বীকার করা মানে এই নয় যে, তা ঠিক হয়েছে বা উত্তম হয়েছে তা নয়। পরিস্থিতিটাকে গ্রহণ করা সেটা আমার পক্ষে যাক বা না যাক। যদি তা না হয় তবে মনের স্থিতি আসবে না যার ফলে পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো যথার্থ হবে না। একজন মানুষ আত্মহত্যা কখন করে? যখন সে সেই পরিস্থিতিকে একসেপ্ট করতে পারে না। যেমন নিজের কোন প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে প্রথমেই তা একসেপ্ট করতে হবে বা গ্রহণ করতে হবে যে বিষয়টি ঘটেছে। একসেপ্ট করলেই না আপনি পরবর্তী সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন যাতে দমকল বাহিনী সহ পরবর্তী গঠনমূলক সিদ্ধান্তগুলো নেয়া যায় তানা হলে তো সিদ্ধান্তই নেয়া যাবে না।
“Positive thinking does not mean what will happen, will be the best, it means whatever will happen will be the accurate for me.”
যেমন কোনো এক অনুষ্ঠানে আমাকে অতিথি হিসেবে চেয়ারে বসতে দেয়া হলো, বসা মাত্র কাঠের চেয়ারটি ভেঙে গেল, আমি পড়ে গিয়ে কিছুটা ব্যথাও পেলাম। ওই মুহূর্তে ঐ ঘটনাটি আমার জন্য একুরেট ছিল, কারণ আমিই ঐ চেয়ারে বসেছি, কেউ ইচ্ছা করে ভাঙা চেয়ার দিক বা ভাঙা থাকুক। একুরেটলি আমার ওপরই ঘটনাটি ঘটেছে একুরেটলি আমিই ব্যথা পেয়েছি অন্য কেউ নয়। সুতরাং একসেপ্ট। এরপর সঠিক সিদ্ধান্ত, ভবিষ্যতে দেখে বসতে হবে এবং সতর্ক থাকতে হবে, যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে।
তাহলে বিষয়টি দাঁড়াল এই, আমরা সব সময়ই ভালো আশা করব, উত্তমটিই আশা করব, যা কিছু হবে ভালো হবে সেরা হবে কিন্তু যদি তা না হয় তবে যা ঘটল তাই ঐ পরিস্থিতির জন্য অনিবার্য ভাবতে হবে এবং সেটি যদি দুর্ঘটনা বা খারাপ কিছু হয় তবে তার কারণগুলো খুঁজে বের করে এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার ব্যবস্থা নেয়া এবং এগিয়ে যেতে হবে পরবর্তী সঠিক সিদ্ধান্তে।
যে চিন্তা আমার মনকে অস্থির করে তা পজিটিভ থিংকিং নয়। বরং যে চিন্তা আমার মনকে শান্তি দেয় বা শান্ত করে নতুন কিছু করার উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেয় তাই পজিটিভ থিংকিং। যে চিন্তা হিংসা, বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা তৈরি করে তা কখনই পজিটিভ থিংকিং নয়। বরং তা শরীর মনকে নেতিবাচক ভাইব্রেশনে আক্রান্ত করে, মন ও শরীরকে বিকৃত করে।
পরোপকারিতা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, সেবা, অন্যের কল্যাণ কামনা, ভালোবাসা সৃষ্টিকারী ভাবনাই হলো পজিটিভ থিংকিং যার ফলাফল সুখ, শান্তি এবং সন্তুষ্টি।
:: ড. মো আলমাসুর রহমান
কাউন্সিলর, হলিসটিক হেলথ কেয়ার সেন্টার
চেয়ারম্যান, প্রোএকটিভ একাডেমি।